ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী পাতরাইল মসজিদ। স্থানীয়ভাবে এটি পাতরাইল দিঘীড়পার আউলিয়া মসজিদ নামেও পরিচিত। কারণ মসজিদের দক্ষিণ পাশে মহান আউলিয়া হযরত মজলিস আউলিয়া খান (রহ.) চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। ধারণা করা হয়, সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ১৩৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
মাজার ও দিঘি
মসজিদের আঙ্গিনায় দরবেশ নাজিমুদ্দিন দেওয়ান (রহ.) এর মাজার এবং আউলিয়া খানের মাজারের দক্ষিণ পাশে ফকির ছলিমুদ্দিন দেওয়ান (রহ.) এর মাজার রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, প্রজাদের পানীয় জলের সমস্যা সমাধান ও ইবাদতের সুবিধার্থে মসজিদের পাশেই ৩২.১৫ একর জমির উপর একটি বিশাল দিঘি খনন করা হয়।
দিঘির দুই পাশে পৃথক ঘাটলা রয়েছে—একটি পুরুষদের জন্য, আরেকটি মহিলাদের জন্য। নারী দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সেখানে গোসলখানা, অজুখানা ও ওয়াশরুম নির্মাণ করেছেন সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ ইমরান হাওলাদার, পিতা মরহুম হাজী ইউনুস হাওলাদার, বাড়ি পুকুরপাড়, আজিমনগর। এই অজুখানা ও ওয়াশরুমটি তিনি নির্মাণ করেন ৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে।
মসজিদের স্থাপত্যশৈলী
মসজিদটি আয়তাকার দশ গম্বুজ বিশিষ্ট। দৈর্ঘ্য ৮৪ ফুট ও প্রস্থ ৪২ ফুট। চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের দেয়াল সাত ফুট পুরু এবং ভেতরে চারটি স্তম্ভ আছে। পূর্ব দিকে পাঁচটি, উত্তর ও দক্ষিণে দুটি করে মোট নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। কিবলা প্রাচীরে পাঁচটি অবতলাকৃতি মিহরাব আছে, যা খিলান পথ বরাবর নির্মিত। ছাদের দশটি গম্বুজ দেখে ধারণা করা হয়, এটি সুলতানী আমলের দশগম্বুজ টাইপ মসজিদের অন্তর্গত।
প্রধান ফটকের উপরে দুটি পাথরের শিলালিপি এবং ভেতরে আরও দুটি শিলালিপি রয়েছে, যদিও সেগুলো অস্পষ্ট। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ইতিমধ্যে এ মসজিদটি সংস্কার করেছে এবং বর্তমানে এটি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন।
সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম
প্রতি শুক্রবার এখানে ভিড় জমে হাজারো দর্শনার্থীর। কেউ আসেন নামাজ পড়তে, কেউ আসেন মানত পালন করতে, আবার কেউ আসেন কোরবানি বা গরু-ছাগলের জন্য দোয়া নিতে। মসজিদ ও দিঘির মাঝের ফাঁকা জায়গায় বসে বিভিন্ন ধরনের দোকান। এখানে পাওয়া যায় ফুচকা, চটপটি, জিলাপি, মিষ্টি, আইসক্রিম, কটন ক্যান্ডি, খেলনা, বাদাম, ভেলপুরি ও শিশুদের জন্য নানা ধরনের খাবার ও সামগ্রী।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা গোলচত্বর থেকে সহজেই পাতরাইল মসজিদে যাওয়া যায়। সেখান থেকে ভাঙ্গা-মাওয়া বিশ্বরোডে ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে পুলিয়া এবং সেখান থেকে আরও ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পাতরাইল মসজিদ অবস্থিত। যেকোনো অটোরিকশা বা স্থানীয় যানবাহনে করে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব।