বিদেশ যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি। কামরুল তালুকদার নামের এক ব্যাক্তি তাদেরকে বিদেশে পাঠাবেন বলে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের কয়েকজন।
কানাডা, আমেরিকা, ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পাঠানোর কথা বলে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ৩০/৪০ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট কয়েককোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু অর্থ নয়, প্রতারিত ব্যক্তিদের পাসপোর্টও আটকে রেখেছে প্রতারকরা। ভিটে মাটি বিক্রি করে কানাডা, আমেরিকা, ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে নি:স্ব হয়ে দিশাহারা ভোক্তভুগীরা। শুধু নি:স্ব নয় প্রতারক চক্র তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখায় পড়েছেন বিপাকে। ভুক্তভোগীদের দাবী, প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে তাদের পাসপোর্ট ও অর্থ উদ্ধার করুক, যাতে করে তারা পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন এবং স্বপ্নপূরণের পথ খুঁজে পান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামের হাবিব তালুকদারের পুত্র কামরুল ইসলাম তালুকদার। কামরুলের। কাজের সহযোগীতায় তার ভাই বাংলাদেশ কর কমিশনে চাকুরীরত লুৎফর রহমান।
এদিকে বিদেশে যেতে না পেরে কয়েকটি পরিবার বেশ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন তুলে, আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে ধার দেনা করে কামরুলের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলো। কিন্তু বিদেশ যেতে না পেরে লোনের কিস্তিও পরিশোধ করতে পারছেনা ঠিকমত, ধারও পরিশোধ করতে পারছে না। এমতাবস্থায় দিশেহারা এসব পরিবার কামরুলের বাড়িতে বার বার যেয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা কামরুলের বাবা ও তার আত্মীয়স্বজনদের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। কারণ, সবাই তাদেরকে ভয় পায়। কামরুলের দুই ভাই কর কমিশনে চাকরি করে। কামরুল প্রকাশ্যে থাকলেও এই প্রতারণার মূলহোতা তার দিই ভাই লুৎফর রহমান ও মফিজ উদ্দিন।
চানু মোল্লা নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি ২ বছর আগে ১৪ লাখ টাকা দিছি। এরপর থেকে শুধু ঘুরাইতেছে। এখন তাদের কাউরেই পাইনা। তারা আমার সাথে প্রতারণা করছে।
মোহাম্মদ কামরুল নামে একজন বলেন ,আমি ১২ লাখ টাকা দিছি। ৩ বছরেও আমারে বিদেশ নিতে পারেনাই। এখন তারা গা ডাকা দিছে। সাজু চৌধুরী নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিনি সাড়ে ৩ বছর আগে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত শুধু ঘুরাইতেছে।
তিনি জানান, আমি যখন টাকা আর বই দিই তখন ঢাকার লুৎফর রহমান নামে একজনের সাথে মোবাইলে কথা বলায় কামরুল। তিনি আমাকে কামরুলের বড় ভাই পরিচয় দেন। কামরুল তাকে বড় বাবু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর তিনি ফোনে আমাকে বলেন, কোন সমস্যা হবেনা । আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর অনুমতি পাইছি। কামরুলকে দিয়ে পরিচালনা করাচ্ছি। চিন্তা করোনা।
সেই বিশ্বাসে আমি কামরুলের হাতে ১৮ লাখ টাকা দেই। টাকা দেওয়ার পর আড়াই বছর যাবৎ ঘুরতেছি। বর্তমানে কামরুল ও তার সহযোগীর সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারতেছি না। তাদের ফোন বন্ধ। ঢাকার বড় বাবু লুৎফর রহমানের সাথেও যোগাযোগ করতে পারিনা। আমি সরকারের কাছে প্রতারক কামরুল, তার সহযোগী আসিফ ইমরান ও তার ভাইদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। এবং আমাদের পাওনা টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার দাবি জানাই।
ভুক্তভোগীরা বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ নেওয়ার কথা বলে ৩০/৪০ জন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আজ পযন্ত কাউকেই বিদেশ নেয় নাই। আমাদের সবার সাথে প্রতারনা করছে। আমাদের জানা মতে সর্বোনিম্ন ১০ লাখ টাকা আর সর্বোচ্চ ২৪ লাখ টাকা নিছে। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে পাঠানোর কথা থাকলেও কারও ১ বছর আবার কারও দেড় বছর আবার কারও তিন বছর হয়ে গেলেও কেউই বিদেশ যেতে পারিনি। কোটি কোটি টাকা প্রতারনা করে হাতিয়ে নিয়েছে কামরুল আর তার দুই ভাই লুৎফর ও মফিজ। আমাদের টাকা দিয়ে বাড়িতে ৪ কোটি টাকার আলিশান প্রাসাদ তৈরী করতেছে। তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যায় না। ফোনও বন্ধ। তার ভাইকে ফোন দিলে সেও কথা বলে না। আমরা কয়েকবার কামরুলের বাড়ি গেছি। তার বাবার সাথে কথা বলছি, তিনি আমাদের টাকা দিবেন বলে জানাইছেন। কিন্তু কবে টাকা পাবো তার কোন গ্যারান্টি নাই। আমরা কি করবো? কিছুই বুঝতেছি না।
বিদেশ পাঠানোর কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাপারে কামরুল ইসলামের এর মুটোফোনে যোগাযোগে করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কামরুল তালুকদারের দুই ভাই লুৎফর রহমান (01712-843122) ও মফিজুর রহমান (0 1745-571335) এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।