জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত প্রাপ্তি জনগণ কতটুকু ভোগ করছে—এ প্রশ্ন এখন সর্বসাধারণের মুখে মুখে। যে আশায় মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, যে স্বপ্ন নিয়ে তরুণ সমাজ বুক চিতিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল, সেই স্বপ্ন আজ কতটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে—এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা। এছাড়া আগামী নির্বাচন কতটুকু জনগণ ভোটার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে সেটা এখন সময়ের ব্যাপার। বর্তমান সরকারের এক বছর পার হলেও লক্ষণীয় কোন সংস্কার এখনো চোখে পড়েনি এমন মন্তব্য বিশিষ্ট জনদের। এখনো থানায় গেলে টাকা দিতে হচ্ছে মামলা করতে থানার সহযোগিতা পেতে। এজন্যই কি এদেশের দামাল ছেলেরা বন্ধুত্ব বরণ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। কেন এত লাশের সারি ,কেন এত হামলা মামলা? আমরা সবাইকে দেশের নাগরিক এ দেশকে ভালবাসি। যারা অপরাধ করেছে তাদেরকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। অবশ্যই আইন তাদের সঠিক বিচার করবে। তাহলে কেন মাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কেন মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। গত সরকারের ছবি দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানাবিধভাবে মানুষকে একাদায় ফেলছে। এসবের প্রতিকার কেন আমরা পাচ্ছি না। এখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদের নাম ভাঙ্গিয়ে ফেক ফেসবুক আইডি তৈরি করে দেশের মধ্যে প্রবনরা চালাচ্ছে একছেড়াণীর দালাল চক্র। তার মধ্যে অন্যতম স্বৈরাচারমুক্ত সুবিধাবাদ বিরোধী এক্সপ্রেস অন্যতম। এ ধরনের অনেক facebook মানুষকে ভুলভাল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। কই কোথাও একটু কোন প্রতিকার পাইনি। জবাব দেবে কে?
জুলাই আন্দোলনে দেশের ছাত্রসমাজের ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা কারো নির্দেশে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের বিবেক ও মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েছিল। যখন চারপাশ নীরব ছিল, তখন তারাই প্রথম আওয়াজ তুলেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাদের এই সাহস, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
এই আন্দোলনের কোনো একক নেতা ছিল না—পুরো ছাত্রসমাজই ছিল এর প্রকৃত মহানায়ক। ফ্যাসিজ সরকারের অবিচার, গুলি ও দমননীতিই সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, আর ছাত্ররা দিয়েছে সেই জাগরণের শিখা। তারা প্রমাণ করেছে, বাংলার ছাত্র অন্যায়ের সামনে কখনো মাথা নত করে না। যেমন প্রমাণ করেছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ২০২৪ এর জুলাই গণঅভ উত্থানে। সেদিন তাদের দাবি ছিল—দেশে বৈষম্য থাকবে না, থানায় বিনামূল্যে জনগণ সেবা পাবে, হাসপাতালগুলোতে চলবে না দালালি বা ধান্দাবাজি মুক্ত এবং কোনো রাজনৈতিক দল অপর দলকে ক্ষমতার জোরে দমন করবে না। সংক্ষেপে বলতে গেলে, তারা চেয়েছিল দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক একটি বাংলাদেশ। কিন্তু হায় হায়- আজ সেই প্রাপ্তির বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ৫ আগস্টের পর দেশে বড় ধরনের পরিবর্তনের আশা জেগেছিল, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই আশায় গুড়ে বালি পড়েছে।
বিগত সরকারের অনেক নেতাকর্মী হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে; দেশের অর্থনীতি পড়েছে চরম চাপের মুখে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে কিছুটা স্থিতি আনলেও সাধারণ মানুষের জীবনে এখনো শান্তি ফেরাতে পারিনি। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন শ্রমজীবী মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া—৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনো প্রয়োজনীয় সবজি মিলছে না। মাংস ও মাছ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এক সময়ের সহজ ডাল-ভাত এখন অনেকের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।বেকারত্বও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শিক্ষিত তরুণদের অনেকেই কাজের অভাবে এখন অটোরিকশা বা ভ্যানচালক হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য যেমন বেড়েছে, তেমনি মানুষ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। চারিদিকে মাদকের ছড়াছড়ি। সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজরা দুর্বার গতিতে দেশের আর রাম রাজত্ব কায়েম করছে। প্রতিহিংসার পুড়ছে দেশ। কেন এমন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেন সমঝোতা নেই। একে অপরকে কেন তারা ছাড় দিতে পারছে না। সরকারের কাছে সুবিধা আদায় করতে নানা বুদ্ধ অবলম্বন করছে। এভাবে আর কত চলবে। রাজনৈতিক দলগুলো কি কোন দায়িত্ব নেই। সরকারের সাথে তালে তাল মিলিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় এবং মানুষের জীবন রক্ষায় কেন ভূমিকা রাখতে পারছে না। সাধারণ মানুষ কিন্তু রাজনীতি বোঝেনা তারা বুঝে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে যেন বাঁচতে পারে। আর যাই চারিদিকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। জনগণের প্রত্যাশা ছিল—জুলাইয়ের আত্মত্যাগের পর দেশে আসবে ন্যায় ও সমতার শাসন। কিন্তু আজও সেই প্রাপ্তি অনেকটাই অপূর্ণ থেকে গেছে। জানিনা আগামী নির্বাচিত সরকার দেশের জনগণের মুক্তি দিতে পারবে।
লেখক ও গবেষক:
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি ঢাকা প্রেসক্লাব।