আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। দিনটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্য ও পবিত্র। এ দিনে জন্মগ্রহণ করেন মানবতার আলোকবর্তিকা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং একই দিনে তিনি পৃথিবী ত্যাগ করেন। নবীজির আগমন মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের সূচনা ছিল। তাঁর জীবন ও শিক্ষা আজও যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনি বিশেষভাবে জরুরি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।
আজ দেশজুড়ে নৈতিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, মাদক ও সহিংসতা সমাজকে গ্রাস করেছে। সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দামে বিপর্যস্ত। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্ম—সকলেই সংকটে জর্জরিত। অথচ আমরা ভুলে যাচ্ছি সেই আলোর পথপ্রদর্শককে, যিনি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন—সত্য, ন্যায়, দয়া ও মানবতার পথে চলতে। তিনি বলেছেন, “মানুষের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে অন্যের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণ বয়ে আনে।” যদি আমরা এ শিক্ষার আলোকে চলি, তবে দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও বৈষম্য দূর করা সম্ভব।
সাংবাদিকদের জন্য নবীজির শিক্ষা আরও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো অন্যায় শাসকের সামনে সত্য কথা বলা।” সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা তাঁর শিক্ষারই বাস্তব রূপ।
রাজনীতিতেও নবীজির শিক্ষা অপরিহার্য। ক্ষমতার জন্য হিংসা ও প্রতিশোধ জাতিকে বিভক্ত করছে। অথচ মক্কা বিজয়ের দিন নবীজি শত্রুকেও ক্ষমা করেছিলেন। যদি আমাদের নেতারা তাঁর এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেন, তবে সংলাপ, ক্ষমাশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
অর্থনীতি ও শ্রমিক অধিকারেও তাঁর শিক্ষা স্পষ্ট। নবীজি বলেছেন, “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরি প্রদান করো।” কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, শ্রমিকের অধিকার, প্রবাসীর রেমিট্যান্সের সম্মান—সবই তাঁর শিক্ষার প্রতিফলন।
নবীজির জীবন কেবল ধর্মীয় আচারের অনুশীলন নয়; বরং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র, সুষম অর্থনীতি ও মানবতার কল্যাণে দায়বদ্ধতার শিক্ষা। আজকের বিশ্বে যুদ্ধ, বৈষম্য, দুর্নীতি ও অস্থিরতার মাঝেই তাঁর শিক্ষা আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ।
ঈদে মিলাদুন্নবী শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং আত্মসমালোচনা ও কর্মপ্রেরণার দিন। আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—
রাজনীতিতে ন্যায় ও ক্ষমাশীল নেতৃত্ব
অর্থনীতিতে ন্যায্যতা ও বৈষম্যহীনতা
সাংবাদিকতায় সাহস ও সত্যনিষ্ঠা
সমাজে সততা, ভ্রাতৃত্ব ও সহনশীলতা
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা বাস্তবায়নই পারে বাংলাদেশকে শান্তি, ন্যায় ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে।