ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী উত্তরপাড়া গ্রামে একটি মসজিদে প্রভাবশালী মহলের বিরোধের কারণে প্রায় ১৩ দিন ধরে নামাজ বন্ধ রয়েছে। এতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম বাবু নামের একজন ব্যক্তি মসজিদের জায়গা নিয়ে সালাম সরদারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি উত্তেজিত হয়ে মসজিদে তালা মেরে দেন। অভিযোগ অনুযায়ী একই পক্ষই মসজিদে তালা দেওয়ার পাশাপাশি সালাম সরদারের বসতঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ফলে তার পরিবার মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ৫০–৬০ জন মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু গত ১৩ দিন ধরে মসজিদে নামাজ আদায় করতে না পেরে তারা নিজ নিজ বাড়িতে নামাজ পড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
সালাম সরদারের বক্তব্য
সালাম সরদার বলেন,
“এই মসজিদ নির্মাণের আগে আমরা দূরের মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। যাতায়াতে কষ্ট হওয়ায় এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে বর্তমান মসজিদটি নির্মাণ করে। তখন রফিকুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে মসজিদের জমি স্থায়ীভাবে ওয়াকফ করে দেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর দশ মাস কেটে গেলেও আজও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।
জমি ওয়াকফ না করায় ইমামের বেতন নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। রফিকুল ইসলাম কিছু টাকা দিলেও, বাকিটা আমাদেরকে মুসল্লিদের কাছ থেকে তুলতে হয়। এতে ইমাম ক্ষুব্ধ হয়ে চাবি রেখে চলে যান। এখন মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায় মুসল্লিদের নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমার পরিবারেরও চরম ভোগান্তি হচ্ছে—আমার ছোট ভাইয়ের শিশু খাবারের জন্য কাঁদলেও দোকানে যেতে পারছে না, আমার বৃদ্ধ অসুস্থ মা চিকিৎসার জন্য বের হতে পারছেন না।”
রফিকুল ইসলাম (বাবু)-র বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন,
“এই মসজিদটি আমাদের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। আমি ইমাম সাহেবকে মাসে প্রায় চার হাজার টাকা বেতন দিয়ে থাকি। তবে জমিটি আমার একার নয়—আমার ভাইবোনসহ পরিবারের সবার অংশ আছে। তাই জমি ওয়াকফ করতে সময় লাগছে। আমরা সবাই মিলে একসাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে জমি দেবো।
মসজিদে তালা দেওয়ার বিষয়টি অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে। সালাম সরদারের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমি ক্ষোভের মাথায় তালা মেরে ফেলি। তবে পথ বন্ধ করার অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে সত্য নয়, সেটা অন্য কেউ করেছে। আমি চাই, এলাকাবাসীর মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হোক। যেভাবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি সেটা মেনে নেব।”
ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য
আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিক মিয়া বলেন,
“মসজিদে তালা মারা বহুত অন্যায় কাজ। মুসলিমগণ নামাজ পড়তে পারছে না—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুই পক্ষকে একাধিকবার ডাকা হলেও তারা আসেনি। বিষয়টি ওসি স্যারের নলেজে আছে। আমি উনাদের বলেছি, আপনারা গ্রাম আদালতে অভিযোগ দায়ের করুন। অভিযোগের ভিত্তিতে নোটিশ দিয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে আনা হবে। না শুনলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, মসজিদে তালা দিয়েছে এবং রাস্তা আটকে দিয়েছে, যা এলাকায় চলাচল ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।
এলাকাবাসীর দাবি
এলাকাবাসী জানান, একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে মসজিদে তালা ঝুলছে। এতে শুধু নামাজ বন্ধ হয়নি, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যাও তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রশাসনের প্রতি আহ্বান
এলাকাবাসী ও সালাম সরদার দাবি করেছেন—
“মসজিদের তালা খুলে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুত জমি দ্রুত ওয়াকফ করে দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা আর না ঘটে।”