ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বাউশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক মোঃ সাহিদুজ্জামান সাহিদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
২০১৯ সালে অর্থ আত্মসাৎ, বৃত্তির টাকা দুর্নীতি, টিউশন ফি আত্মসাৎ, স্বাক্ষর জালিয়াতি, নারী কেলেঙ্কারি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সাহিদুজ্জামান সাহিদকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
তবে বরখাস্ত হওয়ার পরও তিনি নানা জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২৪ সালে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত চিঠি আনেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট হলে আদালত তার বেতন ভাতা স্থগিত করেন এবং মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যেই তিনি বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করে চিঠিপত্র প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সাবেক সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর স্বাক্ষর নকল করার ঘটনাও নথিভুক্ত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ছয় বছর বিদ্যালয়ে না গিয়েই তিনি বেতন-ভাতা ভোগ করেছেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের এডমিন ও এমপিও এর ইএফটি পাসওয়ার্ড তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্ধেন্দু কুমার সরকারসহ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ এমদাদ ফকির ও শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্ধেন্দু কুমার সরকার বলেন,
“সাহিদুজ্জামান সাহিদ নানা জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য ও নারী কেলেঙ্কারির কারণে বরখাস্ত হয়েছেন। প্রায় ছয় বছর বিদ্যালয়ে না আসলেও সুবিধা ভোগ করছেন এবং নানা ভুয়া অভিযোগ দিয়ে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে হয়রানি করছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তাকে আর বিদ্যালয়ে দেখতে চায় না।”
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে সাহিদুজ্জামান সাহিদ দাবি করেন,
“আমি উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি থাকায় রাজনৈতিক কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর শিক্ষা বোর্ড আমাকে স্বপদে পুনর্বহাল করে। কিন্তু শিক্ষক ও এলাকাবাসীর ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী বলেন,
“বিদ্যালয়ের তদন্তে দেখা গেছে শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসী সবাই প্রধান শিক্ষক সাহিদের বিরুদ্ধে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।”
এ নিয়ে বর্তমানে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা দ্রুত এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।