মাত্র ৬ বছর বয়সের শিশু প্রকৃতি হিয়া হালদার। ফরিদপুর থেকে বোনের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে যাওয়ার পথে যাত্রা যে তার জন্য বিভীষিকায় পরিণত হবে, তা ভাবেনি কেউ। লোকাল বাসের রেগুলেটর বিস্ফোরণে গরম পানিতে দগ্ধ হয়েছে এই শিশু। বর্তমানে সে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
দগ্ধ হিয়া রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের গোবিন্দ হালদারের মেয়ে। সে ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর এলাকায় বড় বোন শিল্পী হালদার সোনালীর পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকে এবং ফরিদপুর সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শুক্রবার বিকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হিয়ার দুটি পায়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া, আর যন্ত্রণায় মাঝে মাঝে চিৎকার করছে সে। তার পাশে বসে অঝোরে কাঁদছেন মা কৃষ্ণা হালদার। চার বোনের মধ্যে সবার ছোট হিয়া পরিবারের সবার আদরের। তাকে ঘিরে চোখের পানি ফেলছিলেন বাকি দুই বোনও।
হাসপাতালের নার্স জানান, শিশুটির হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে কি না, তা নিশ্চিতভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না।
ঘটনার বর্ণনায় হিয়ার বড় বোন শিল্পী হালদার জানান, গত ২৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) মেজো বোন পূর্ণিমা হালদারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল হিয়া। প্রথমে ফরিদপুর থেকে গোয়ালন্দ পৌঁছে কুষ্টিয়াগামী "অনিক পরিবহন" নামে রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির একটি লোকাল বাসে ওঠেন (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৮১৬৩)। যাত্রী বেশি থাকায় ইঞ্জিনের পাশের সিটে বসেন পূর্ণিমা, কোলে ছিল হিয়া।
বিকাল ৫টার দিকে রাজবাড়ী শহরের মুরগির ফার্ম এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ বাসটির রেগুলেটর বিস্ফোরণ ঘটে। গরম পানি ছিটকে পড়ে হিয়ার দুই পায়ে। দ্রুত স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।
পূর্ণিমা হালদার বলেন, “বাসে উঠার পর থেকেই ইঞ্জিনের পাশের সিটটি গরম ছিল। রাজবাড়ী শহরে পৌঁছালে চালক বাস থামিয়ে হেলপারকে ইঞ্জিন খুলে দেখতে বলেন। কোনো যাত্রীকে নামতে বলা হয়নি। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে এবং গরম পানি ছিটকে পড়ে হিয়ার পায়ে।”
ঘটনার পর মালিক সমিতিতে অভিযোগ দিতে গেলে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন বড় বোন শিল্পী হালদার। তিনি বলেন, “জানতে পারি বাসটির ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স—কোনো কাগজপত্রই নেই। আমার ছোট বোন আজ স্কুলে যেতে পারছে না। আমরা দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেব।”
এ বিষয়ে রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার ভৌমিক স্বীকার করে বলেন, “বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ হয়তো ১-২ মাস আগে শেষ হয়েছে। নতুন ফিটনেস সনদও দেওয়া হচ্ছে না। দুর্ঘটনা সড়কে ঘটতেই পারে। তবে আমরা শিশুটির খোঁজ রাখছি এবং পরিবারটির সঙ্গে আলোচনায় বসবো।”
রাজবাড়ী বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছির উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নোট: শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।